কিভাবে করবেন সময়ের সদ্ব্যবহার

0
3250

কিভাবে করবেন সময়ের সদ্ব্যবহার
——————–­——

দিনটা যদি ২৪ ঘণ্টার না হয়ে ৩৬ ঘণ্টার হত, তাহলে সব কাজ শেষ করে ফেলতাম-এমন চিন্তা অামরা বহুবার করেছি। কিন্তু এই ২৪ ঘণ্টাকেই অামরা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছি কিনা, সেটা কিন্তু কখনোই ভেবে দেখিনি। ড.মো.অাব্দুর রহমান অাল অারিফী স্যারের ‘Enjoy your life’ বইটিতে পড়েছিলাম…..
“অন্ধকারকে গালি না দিয়ে
প্রদীপটিকে মেরামত কর।”

এই দৃষ্টিকোন থেকে অামাদের ২৪ ঘণ্টাকেই যথাযথভাবে কাজে লাগানোর কথা ভাবতে হবে। জীবনে ব্যস্ততা বাড়লেও দিনের পরিধি তো আর বাড়ে না। আর তাই সময়ের সীমারেখা মেনেই কাজ করে যেতে হয়। তাই সময়ের মূল্য অনেক বেশি।

অথচ কাজের জগতে অথবা আমাদের চারপাশের পরিচিত গণ্ডির মধ্যেই এমন অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়, যাদের কাছে সময়ের কোনো মূল্যই নেই। অার এটা নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো অপরাধবোধও থাকেনা।এমন মানুষের সঙ্গে কাজ করা সত্যিই খুব কষ্টকর।তবে এমন স্বভাবের কারণে সবচেয়ে বড় ক্ষতি কিন্তু তাদেরই হয়।এর জন্য প্রায়ই তারা ডেডলাইন মিস করেন এবং প্রফেশনালিজমের অভাবে অন্যের কাছে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে যায়। কেউ কোনো কাজের জন্য তাদের ওপর ভরসা করতে পারেননা। কারন কাজের জন্য তারা হয়ত নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছলেনই না।

সময়ের গুরুত্ব বুঝতে বুঝতে যখন তাদের জীবনের অর্ধেকটা পাড় করে ফেলেন, তখন তারা কেবল অাফসোসই করেন এবং তাদের এ অবস্থার জন্য নিজের ভাগ্যকে দায়ী করেন। অথচ সময়কে কাজে লাগানো অর্থাৎ টাইম ম্যানেজমেন্টের কথা কখনোও মাথায়ই অানেনি।

চলুন এবার তাহলে টাইম ম্যানেজমেন্ট এর উপায়গুলো একবার দেখে নিই।

সাধারনত টাইম ম্যানেজমেন্ট করার মত উপদেশ শুনলেই অামরা বাসায় এসে সাথে সাথে একটা সাপ্তাহিক রুটিন তৈরি করে ফেলি,প্রতিজ্ঞাও করি,”অাজ থেকে এভাবেই চলবো।” কিন্তু মজার ব্যাপার হলো,প্রথম দুদিন রুটিনমাফিক চলার পর তৃতীয়দিন কাগজে লেখা সেই রুটিনটাই হয়তোবা অার খুঁজে পাওয়া যায়না অথবা অামরা ভুলেই যাই সেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রুটিনের কথা। সেটা হতে পারে নিজের বেখেয়ালির জন্যে,হতে পারে অনাকাঙ্খিত কোন পরিস্থিতির কবলে পড়ে। অার এটাই কিন্তু স্বাভাবিক।

ভুলে গেলে চলবেনা, অামরা মানুষ, রোবট নোই যে প্রতিদিন গদবাধা নিয়মে একইভাবে চলব। বরং সময়ের প্রয়োজনে পরিস্থিতির অনুকূলে খাপখাইয়ে নেয়াটাই স্মার্টনেস।

তাই এভাবে সাপ্তাহিক রুটিন না করে…..

১.কাজকে ভাগ করে নিন:

প্রতিদিন অাপনি কি কি কাজ করবেন, সেটা অাগের দিন রাতেই একটা লিস্ট করে ফেলুন(কাজের প্রায়োরিটি অনুসারে)। এবং প্রতিটি কাজকে সময় অনুযায়ী ভাগ করে নিন।

২.অসমাপ্ত কাজের লিস্ট তৈরি করুন:

একইসাথে অাজকে কোন কাজগুলো অাপনি করতে পারেননি, সেগুলোও প্রতিদিন লিস্ট করুন।এতে নিজের মধ্যে অপরাধবোধ জন্ম নেবে এবং না করতে পারা কাজের হারও দিন দিন কমে যাবে।

“Let our advance worrying become advance thinking and planning.”
– Winston Churchill

৩.ইমেইল চেকিং:

প্রতিদিন সকালে উঠেই অাপনার ইমেইলটা চেক করুন। তাহলে অন্তত ডেডলাইন মিস করার মত হতাশাজনক মূহুর্ত থেকে রেহাই পাবেন।

৩.সময় বাচাঁনোর চেষ্টা করুন:

সব কাজের শুরুর সময়সীমা পনের মিনিট এগিয়ে আনুন। অর্থাৎ কাজে যাবার সময় সকাল ৮ টা । তাহলে আপনি ধরে নিন ৭ টা ৪৫। তাহলে যদি ঘটনাচক্রে আপনার দেরীও হয়ে যায় তখন আশাকরি আপনি পিছিয়ে পড়বেন না। আর যদি আপনি আগে চলে যান তখন টুকি টাকি কাজ থাকলে তা সেরে ফেলুন,যেমন-মোবাইলে কারও সাথে কথা বলা, আজকের দিনের কর্মসূচি তৈরি করা অথবা আগে করে থাকলে তাতে আরেক বার দৃষ্টিপাত করা।

৪. ফোনে নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন:

যখন আপনি মনোযোগ দিয়ে একটি কাজ করার চেষ্টা করছেন, অথবা পড়ার সময় যদি একটু পরপর ফেইসবুক, ইমেইল কিংবা টেক্স অাসার টিং টিং শব্দ অাপনার কানে অাসে, সেটা অাপনার মনোযোগ নষ্ট করে দিবে।তাই কাজের সময় ফোনের নোটিফিকেশন অফ রাখুন।

৫. ফেইসবুকের যথাযথ ব্যবহার করুন:

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ফেইসবুক আমাদের অনেক কাজে লাগে। কিন্তু এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে ফেইসবুকের কারণে আমাদের অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। কারন অামরা অধিকাংশ সময় ম্যাসেন্জারে চ্যাটিংয়েই ব্যয় করি। তাই প্রয়োজন ছাড়া ফেসবুক থেকে দূরে থাকুন।

৬.টাইম ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ ব্যবহার করুন:

বর্তমানে অনলাইনে টাইম ম্যানেজমেন্ট এর বিভিন্ন অ্যাপস পাওয়া যায়। যেমন:টোগল, ট্রোলো,টু ডু লিস্ট,পান্ডা ফোকাস মুড ইত্যাদি। এই অ্যাপগুলোর মূল কাজই হলো কীভাবে আমাদের সীমিত সময়কে আমরা পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করে আমাদের কাজের বেস্ট অাউটপুটটা পেতে পারি।

অামার ব্যক্তিগত পছন্দ হলো পান্ডা ফোকাস মুড। এটি মূলত একটি ব্রাউজার এক্সটেনশন। এই ব্রাউজারটি ব্যবহার করার সবচেয়ে মজার দিক হল আপনি নতুন যেকোনো ট্যাবে গেলেও সে আপনাকে বারবার মনে করিয়ে দেবে আপনার কী কী কাজ বাকি রয়েছে! মানে এক কথায় সে আপনার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বার বার মনে করিয়ে দেবে।

৭.প্রেসার নিয়ে কাজ করা পরিহার করুন:

অাপনি যদি মনে করেন, একটানা ১২ ঘণ্টা পড়াশুনা করে পুরো সিলেবাস শেষ করবেন, তাহলে সেটা অাপনার ভুল পরিকল্পনা। অামার মতে, পড়ার প্রতি ২-৩ ঘণ্টার বেশি সময় মনোযোগ ধরে রাখাটা সত্যিই কঠিন ব্যাপার। তাই যেকোন কাজকে ছোট ছোট সময়ে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিন।কাজের মাঝে শিক্ষামূলক বিনোদন বা বিশ্রাম নিন। ঘুম অাসলে ঘুমিয়ে পড়ুন। কারন,

“ঘুমকে মস্তিষ্কের মেমোরি চার্জার বলা হয়।”

এতে বিশ্রামও হবে এবং কাজের প্রতি মনোযোগও বাড়বে। দ্রুত অাপনার কাজ শেষ করতে পারবেন।

৮.সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করুন:

সময়মত কাজ শেষ করে একদিকে যেমন অন্য কাজে মনোনিবেশ করা যায়,তেমনি মানসিক শান্তিও পাওয়া যায়।

“যারা সময়মত কাজ শেষ করে,
সময়ই তাদের জন্য অপেক্ষা করে।”

অাপনি চাইলেই টাইম মম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে অাপনার জীবনের প্রতিটি মূহুর্তকে অর্থবহ করে তুলতে পারবেন। ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে সঠিকভাবে প্রস্তুত করতে পারবেন। মনে রাখবেন,

“By failing to prepare,
you are preparing to fail.”
-Benjamin Franklin

………………….

Jesmin Akter

Facebook Comments