বজ্রপাতে আমাদের করনীয়

0
2302

বজ্রপাতে আমাদের করনীয়

বজ্রপাত একটি প্রাকিতিক দূর্যোগ। একটু মেঘ বৃষ্টি হলে বজ্রপাতের বিষয়টি আমাদেরকে আতঙ্কিত করে তুলছে। প্রতি বছর পাল্লা দিয়ে বজ্রপাতে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বজ্রপাতের কারনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তের তথ্য মতে, ২০১৫ সালে ২২৬ জন, ২০১৬ সালে ৩৯১ জন, ২০১৭ সালে ২৬২ জন লোকের মৃত্যু ঘটে। বজ্রপাতকে একেবারে দূরীকরণের কোন প্রন্থা না থাকলেও জন সচেতনতার মাধ্যমে আমরা এই মৃত্যুর হার অনেকটা লাঘব করতে পারি।

বজ্রপাতের সময় আমাদের যা যা করনীয়, তা অবশ্য আমাদের অনেকেরই অজানা। তাই এখন জেনে নেওয়া যাক-

১) উচুঁ গাছপালা ও বিদ্যুৎ লাইন থেকে দূরে থাকা।
বজ্রপাত হলে উচুঁ গাছপালা বা বিদ্যুতের খুটিতে বজ্রপাতের আশংকা বেশি থাকে। তালগাছ বা বড় গাছ ইত্যাদিতে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই বজ্রপাতের সময় এসব স্থানে আশ্রয় না নেওয়া।

২) খোলা স্থান থেকে দূরে থাকা।

বজ্রপাতের সময় কোন অবস্থাতেই খোলা স্থানে না থাকা। খোলা স্থানে আটকে গেলে পায়ের আঙুলের উপর ভর দিয়ে কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়া। যতো দ্রুত সম্ভব দালান বা কংত্রুিটের ছাদের নিচে আশ্রয় নেওয়া, যথাসম্ভব টিনের ছাউনি এড়িয়ে চলুন।

৩)ধাতব বস্তু স্পর্শ না করা।

বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ, ল্যান্ড লাইন টেলিফোন স্পর্শ না করা। এমনকি ধাতব হাতল যুক্ত ছাতাও তাই, পাস্টিক বা কাঁঠের
হাতল যুক্ত ছাতা ব্যবহার করা।বজ্রপাতের সময় এগুলো স্পর্শ করে বহু মানুষ আহত হয়েছে।

৪) জানালা থকে দূরে থাকা।
বজ্রপাতের সময় জানালা কাছাকাছি না থেকে জানালা বন্ধ রেখে ঘরের ভেতরে অবস্থান করা। কেননা, আশেপাশে বজ্রপাত হলে আহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৫)পরস্পর থেকে দূরে থাকা।
বজ্রপাতর সময় কয়েকজন জড়ো হয়ে না থাকা। একজন থকে অন্য জন ৫০ থকে ১০০ ফুট দূরে থাকা। কোন বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকলে সবাই এক কক্ষে না থকে আলাদা আলাদা কক্ষে অবস্থান করা।

৬)রাবারের বুট পরিধান করা।

বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপদজনক। তাই এ সময় বিদ্যুত অপরিবাহি রাবারের জুতা পরিধান করা হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ।

৭) বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রের ব্যবহার থকে বিরত থাকা।

বজ্রপাতের সময় মোবাইল, টিভিসেট, কম্পিউটার, ফ্রিজ সহ সকল বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থকে বিরত থাকা এবং সেগুলো বন্ধ রাখা। বন্ধ রাখলেও সেগুলো না ধরা। বজ্রপাতের আভাষ পেলে প্লাগ খুলে বিদ্যুৎ সংযোগ থকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। অব্যবহৃত যন্ত্রপাতির প্লাগ আগেই খুলে রাখা।

৮)গাড়ির ভেতরে থাকলে।

গাড়ির ভেতরের ধাতব বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা। গাড়ির কাচেও হাত না দেওয়া। সম্ভব হলে গাড়িটিকে নিয়ে কোন কংত্রুিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেওয়া।

৯) পানি থকে বিরত থাকা।

পানি খুব ভাল বিদ্যুৎ পরিবাহী। তাই যতদ্রুত সম্ভব কোন জলাবদ্ধ স্থানে থাকলে সেখান থকে সরে গিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া।

১০) গগনচুম্বী স্থানে নিজেকে না রাখা।

বজ্রপাতের সময় এমন কোন স্থানে যাওয়া না থাকা, যে স্থান ভৌগলিক সীমার সবকিছু উপরে। বাড়ির ছাদ কিংবা উচুঁ কোন স্থানে থাকলে সেখান থকে নেমে পড়া।

১১)বাড়ি সুরক্ষিত রাখা।

বজ্রপাতের সময় বাড়িকে নিরাপদ রাখার জন্য বজ্র নিরোধক বাড়ি স্থাপন করা।বাড়ির চারপাশে তাল, নারিকেল গাছ লাগানো, কেননা বজ্রপাত হলে ওইসব উচুঁ গাছের ওপর ওপরই পড়বে।

১২)বজ্রপাতে আহত হলে।

বজ্রপাতে কেউ আহত হলে, তাকে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতোই চিকিৎসা করা। বজ্রপাতে আহত ব্যাক্তিকে স্পর্শ করাও বিপদ জনক। তাই শুকনো কাঠ দিয়ে ধাক্কা দেওয়া। আহত ব্যাক্তির শ্বাসপ্রশ্বাস ও হুদস্পনদন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা এবং যতদূর সম্ভব চিকিৎসক ডাকা।

Murad Ansary

Facebook Comments