IELTS
International English Language Testing System হচ্ছে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পরীক্ষা। যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি না এই পরীক্ষা মূলত তাদের জন্য। ব্রিটিশ কাউন্সিল, আইডিপিঃ আইইএলটিএস অস্ট্রেলিয়া ও কেমব্রিজ ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাসেসমেন্ট কর্তৃক যৌথভাবে এটি পরিচালিত হয় এবং এটি ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রধানত যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য আইইএলটিএস অপরিহার্য ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর আমেরিকা অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এ পরীক্ষার স্কোর গ্রহণ করছে এবং ইউরোপের বেশির ভাগ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইইএলটিএস গ্রহণ করে থাকে। এই পরীক্ষায় সবাই অংশ নিতে পারেন, কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। এখানে বয়সেরও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বাংলাদেশে আইইএলটিএস পরীক্ষা পরিচালনাকারী অন্যতম প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ কাউন্সিল।
প্রয়োজন হবে:
IELTS পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি বৈধ পাসপোর্ট।
পাসপোর্ট সাইজের সদ্য তোলা ছবি।
পূরণকৃত ফর্ম
রেজিস্ট্রেশন ফি (বর্তমানে ১৬,৫০০ টাকা)
পরীক্ষা পদ্ধতি:
আইইএলটিএস পরীক্ষা দেয়া যায় দুই ধরনের মডিউলে:
IELTS Academic ও IELTS General Training.
IELTS Academic: স্নাতক, স্নাতকোত্তর অথবা পিএইচডি পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য পরীক্ষা দিতে হয় একাডেমিক মডিউলে।
IELTS General Training: কোনো শিক্ষার্থী কারিগরি বিষয় বা প্রশিক্ষণে ভর্তি হতে চান, তবে তাঁকে জেনারেল ট্রেনিং মডিউলে পরীক্ষা দিতে হয়। এ ছাড়া যারা ইমিগ্রেশনের জন্য যেতে চান, তাদেরকেও জেনারেল ট্রেনিং মডিউলে পরীক্ষা দিতে হয়।
আইইএলটিএস পরীক্ষায় দুই ধরনের মডিউলেই লিসেনিং (Listening), রিডিং (Reading), রাইটিং (Writing) ও স্পিকিং (Speaking) এই চারটি অংশ থাকে। তবে অংশগুলোর মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকে। আমাদের আলোচনা IELTS Academic এর মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখা হবে।
সময় বন্টন:
লিসেনিং: ৪০ মিনিট
রিডিং: ৬০ মিনিট
রাইটিং: ৬০ মিনিট
স্পিকিং: ১১-১৪ মিনিট
মোট সময়কাল: ২ ঘন্টা ৪৫ মিনিট
লিসেনিং, রাইটিং ও রিডিং একসাথেই সম্পন্ন হয়। তবে স্পিকিং অংশ একই দিনে অথবা সর্বোচ্চ ৭ দিন আগে বা পরে সম্পন্ন হবে।
লিসেনিং:
IELTS এর এই অংশে আপনার একটি বিদেশি ভাষা হিসেবে ইংরেজি শুনে বুঝতে পারার দক্ষতা পরীক্ষা করা হবে। এই অংশে মোট ৪ টি সেকশন থাকে। প্রত্যেকটি সেকশনে ১০টি প্রশ্ন থাকে। মোট সময় ৪০ মিনিট- এর মধ্যে ৩০ মিনিট পরীক্ষা আর বাকি ১০ মিনিট উত্তর পত্রে উত্তর তোলার জন্য বরাদ্দ।
১ম ও ২য় সেকশনে সাধারণত দৈনন্দিন সামাজিক বিষয়ের উপর আলোচনা শুনানো হবে। ১ম সেকশনে ২জন স্পিকার ও ২য় সেকশনে ১জন স্পিকার থাকবে।
৩য় ও ৪র্থ সেকশনে শিক্ষামূলক ও প্রশিক্ষণমূলক আলোচনা শুনানো হবে। ৩য় সেকশনে ২জন প্রধান স্পিকার থাকে যারা শিক্ষা জীবনের কোন বিষয়ে কথা বলবে। যেমন: ২ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মধ্যে কথোপকথন। ৪র্থ সেকশনে একজন স্পিকার থাকবে। যেমন: একজন ছাত্রের নিজ একাডেমিক বিষয় নিয়ে আলোচনা।
প্রত্যেকটি সেকশনের কথপোকথন শুরু হওয়ার আগে একটি সূচনা পর্ব থাকবে যাতে পরীক্ষার্থীরা কি বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে তা বুঝতে পারে। প্রত্যেকটি তথ্য দেওয়ার ক্রম অনুযায়ী প্রশ্ন থাকবে আর প্রশ্নের সাথে সাথেই উত্তর করতে হবে । ফলে ১টি প্রশ্নের উত্তর করার পরে পরের প্রশ্ন করা হবে। বানান ও গ্রামারে ভুলের জন্য নম্বর কাটা যাবে।
রিডিং:
IELTS এর এই অংশে আপনার ইংরেজিতে কোন কিছু পড়ে বোঝার দক্ষতা পরীক্ষা করা হবে। এই অংশে মোট ৩টি আর্টিকেল থাকবে ২১৫০-২৭৫০ শব্দের। আর্টিকেল গুলো একজন আন্ডারগ্র্যাজুয়েট বা পোস্টগ্র্যাজুয়েট ছাত্রের উপযোগী হবে। সাধারণত বিভিন্ন বই, পত্রিকা, জার্নাল, ম্যাগাজিন ও অনলাইনে জনসাধারণের জন্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের লেখা গুলোই থাকে। এই অংশে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন থাকে। যেমন:
Multiple Choice,
Short-Answer Questions,
Identifying Information,
Identifying Writer’s Views,
Labeling Diagrams,
Completing a Summary Using Words Taken From The Text and
Matching Information/Jeadings/Features In The Text/Sentence Endings.
খুব মনোযোগ দিয়ে এই অংশটি লিখতে হবে । কারণ বানান ও গ্রামারে ভুলের জন্য নম্বর কাটা যাবে ।
স্পিকিং:
পরীক্ষার এই অংশে আপনার ইংরেজিতে কথা বলার সামর্থ্য যাচাই করা হবে। স্পিকিং এ পরীক্ষক ও পরীক্ষার্থীর মধ্যে একটা ফেস টু ফেস ইন্টারভিউ হয়। মোট ১১-১৪ মিনিটেই এই অংশটি সম্পাদিত হয়। মোট তিনটি সেকশন থাকে স্পিকিং অংশে।
সেকশন ১(পরিচয় পর্ব): এই সেকশনে পরীক্ষার্থীকে নিজের পরিচয় দিতে বলা হবে। তার বাড়ি, পড়াশোনা, কর্মক্ষেত্র, পছন্দ, IELTS দেওয়ার কারণ ইত্যাদি বিষয়ে বলতে বলা হবে। সময় ৪-৫ মিনিট।
সেকশন ২ (লং টার্ণ): এইসেকশনে পরীক্ষার্থীকে একটি কার্ড দেওয়া হবে যাতে একটি নির্দিষ্ট বিষয় যার উপর বক্তব্য দিতে হবে সেই সাথে কিছু পয়েন্ট যেগুলো আপনাকে বক্তব্যতে উল্লেখ করতে হবে তা দেওয়া থাকে। সময় ৩-৪ মিনিট।
সেকশন ৩ (আলোচনা): এই সেকশনে মূলত সেকশন ২ এ বলা হয়েছে এমন একটা প্রশ্নের উপর পরীক্ষক ও পরীক্ষার্থীর মধ্যে একটা আলোচনা হয়। সময় ৩-৪ মিনিট।
রাইটিং:
এই অংশে আপনার ইংরেজিতে কোন কিছু লেখার দক্ষতা পরীক্ষা করা হবে। মোট ২টি রচনা লিখতে বলা হবে। একটি হচ্ছে ২০ মিনিটে ১৫০ শব্দের মধ্যে। আরেকটি হচ্ছে ৪০ মিনিটে ২৫০ শব্দের মধ্যে।
- প্রথম রচনাটিতে একটি গ্রাফ , চার্ট, টেবিল ইত্যাদি বর্ণনা করতে বলা হবে ।
- দ্বিতীয় রচনাতে পরীক্ষার্থীকে একটি সমস্যা, যুক্তি বা দৃষ্টিকোণ বর্ণনা করতে বলা হবে।
ফলাফল:
IELTS পরীক্ষা হওয়ার ১৩ দিন পরেই ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এই পরীক্ষায় কোন পাস-ফেল নেই। ফলাফল ঘোষণা করা হবে ব্যান্ড স্কেলের মাধ্যমে (১-৯)। প্রত্যেকটি অংশে আলাদা ব্যান্ড স্কোর(১-৯) প্রকাশ করা হয়। পরে সেগুলির গড় করে এভারেজ ব্যান্ড স্কোর (১-৯) প্রকাশ করা হয়। প্রত্যেক ব্যান্ড ইংরেজিতে একটি নির্দিষ্ট মানের দক্ষতা নির্দেশ করে।
৯টি ব্যান্ডকে নিম্নোক্তভাবে বিশ্লেষণ করা যায়:
9 দক্ষ
8 খুব ভালো
7 ভাল
6 উপযুক্ত
5 পরিমিত
4 সীমিত
3 খুবই সীমিত
2 সবিরাম
1 অনুপযুক্ত
0 পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি।
ফলাফল প্রকাশের পর পরীক্ষার্থী পরীক্ষা রিপোর্টের একটি কপি হাতে পাবে। পরীক্ষা রিপোর্টের মেয়াদ ২ বছর থাকে। অর্থাৎ আপনি আগামী ২ বছর বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার সময়ে এই IELTS পরীক্ষার স্কোর দেখাতে পারবেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করার জন্য ন্যূনতম IELTS স্কোর:
বিশ্বের ৫১% শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য IELTS পরীক্ষা দেয়। কারণ সমগ্র বিশ্বের ৯০০০ এরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান IELTS স্কোর গ্রহণ করে।
নিচে বিশ্বের কয়েকটি দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো গড়ে কত IELTS স্কোর চায়, তা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র:
প্রায় ৩০০০ টি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় IELTS স্কোর গ্রহণ করে। সর্বোচ্চ ৮.৫ IELTS স্কোর চাওয়া হয় কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। এছাড়াও গড়ে প্রায় সব টপ র্যাংকিংয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সর্বনিম্ন ৭ স্কোর গ্রহণ করে।
যুক্তরাজ্য:
যুক্তরাজ্যের সব টপ র্যাংকিংড বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গড়ে ৬.৫-৭ IELTS স্কোর চায়।
কানাডা:
কানাডার বেশিরভাগ টপ র্যাংকিংড বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গড়ে ৬.৫ IELTS স্কোর চায়।
অস্ট্রেলিয়া:
অস্ট্রেলিয়ার বেশিরভাগ টপ র্যাংকিংড বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও গড়ে ৬.৫ IELTS স্কোর চায়।
এছাড়াও অ-ইংলিশভাষী দেশগুলোর টপ র্যাংকিংড বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ৬-৭ IELTS স্কোর চায়।
কেন্দ্র:
ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও কুমিল্লা জেলায় ব্রিটিশ কাউন্সিল ও আইডিপি সেন্টারে IELTS পরীক্ষা দেওয়া যায়।